কেন পড়বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

কেন পড়বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

দেশের সেরা ৫ টি পাবলিক ভার্সিটির একটা। তুমি যদি ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং এর কথা চিন্তা করো, পাবলিক ভার্সিটিগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই কিন্তু মানুষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলে। ঢাবি যদি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হয় তবে রাবি হবে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ।


লেখক: সংগৃহীত প্রকাশের তারিখ: May 16, 2021

যে ১২টি কারনে পড়বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

১.দেশের সেরা ৫ টি পাবলিক ভার্সিটির একটা। তুমি যদি ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং এর কথা চিন্তা করো, পাবলিক ভার্সিটিগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই কিন্তু মানুষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলে। ঢাবি যদি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হয় তবে রাবি হবে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ। দেশের সেরা ৫ টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটায় পড়ার সৌভাগ্য খুব কম মানুষেরই হয়। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যে কতো বড় তা তুমি অনুমান করতে পারো এর ৩৫০০০ শিক্ষার্থী সংখ্যা দিয়ে

২. বসবাসের জন্য Perfect শহর রাজশাহী। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছো সেটা যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি কোন শহরে থেকে পড়ছো, তাও বেশ গুরুত্বপূর্ন। বাংলাদেশের সুন্দর ও গোছানো নগরীর একটা হলো রাজশাহী। “শিক্ষানগরী রাজশাহী” এই কথাটি নিশ্চয়ই শুনেছ? তোমাকেই বলছি, রাজশাহী মহানগরে কোনো ট্রাফিক জ্যাম নেই। এর রাস্তাগুলো যেমন প্রশস্ত, ফুটপাতগুলোও তেমনি পরিষ্কার। আর রাজশাহীই একমাত্র মহানগরী, যার বায়ু দূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম। অনেকেই রাজশাহীর গরম নিয়ে আপত্তি করবে হয়তো। তবে শোনো, এই উষ্ণ জলবায়ু ছাড়া এত সুস্বাদু আম আর রাজশাহীর বিখ্যাত সিল্ক পাবে কোথায় ? আবাসিকতা খরচের প্রসঙ্গে বলি, ঢাকা - চিটাগাং - সিলেটের প্রায় অর্ধেক খরচে তুমি রাজশাহীতে খুব মানসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারবে

৩. ৫৮ টি ডিপার্টমেন্ট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আকর্ষনীয় দিক হলো এর এতগুলো ডিপার্টমেন্ট। ইউনিভার্সিটির কথা যদি আরও বলি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রয়েছে বিদেশী শিক্ষার্থীরাও। এমনকি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের অনেক আদিবাসী বা উপজাতি শিক্ষার্থীও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। প্রচণ্ড একটা ভালোলাগা কাজ করবে যখন দেখবে তোমারই এক ক্লাসমেট নেপাল কিংবা নাইজেরিয়া থেকে এসেছে। দর্শন, ভাষা, সাহিত্য, আইন, নাট্যকলা, সংগীত, পদার্থবিদ্যা, পরিসংখ্যান, রসায়ন, ফার্মেসি, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, অর্থনীতি, লোক প্রশাসন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, নৃবিজ্ঞান, ক্লিনিকাল সাইকোলজি, জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি, কৃষি, ভেটেরিনারি, পেইন্টিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং – কোনটি পড়তে চাও তুমি? প্রতিটি বিভাগই অনেক সমৃদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ বলি, রাবি প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে খুবই সমৃদ্ধ এবং দেশের সবচেয়ে বড় প্রাণিবিদ্যা মিউজিয়াম রয়েছে। রাবি’র কম্পিউটার প্রকৌশলের ল্যাব ফ্যাসিলিটি বুয়েট, রুয়েট কিংবা কুয়েটের সমপরিমাণ। এবং আরেকটা ভালো দিক হলো, বিভাগগুলোতে সেশন জট নেই।

৪. HSC রেজাল্ট খারাপ কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা। HSC তে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বা গণিতে প্লাস না পাওয়ায় বুয়েট, রুয়েট, কুয়েটের মতো জায়গাগুলোতে পরীক্ষা দিতে পারবে না ভেবে হয়তো অনেকেই হতাশ। স্বপ্ন ছিলো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া, এখন কী করবো? তোমাদের জন্য বলি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ অনেক সমৃদ্ধ। সিএসই, আইসিই, ট্রিপল ই, এপ্লাইড কেমেস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এপ্লাইড ফিজিক্স এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটারিয়েল সায়েন্স ইত্যাদি বিভাগগুলোর শিক্ষাগত মান, যোগ্য শিক্ষকমন্ডলী এবং ল্যাব সুবিধা যথেষ্ট ভালো

৫. নতুন কাজ করার সুযোগ অনেক। যারা একটু অর্গানাইজার টাইপ, বা সবসময় চাও নতুন কিছু করতে, এমন কিছু করতে যা আগে কেউ করেনি, তোমাদের জন্য সুখবর। রাজধানী থেকে দূরে হওয়ায় রাজশাহীতে এখনো অনেক কাজই হয়নি, অনেক কিছুই শুধু উদ্যোগী মানুষের অভাবে পড়ে আছে। নতুন কাজ বা Entrepreneurship এর জন্য ঢাকার বাইরের শহরগুলোর মাঝে রাজশাহী বেশ উপযোগী

৬. নীল - সাদা বাস। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে শহর ভ্রমণের আনন্দটা অন্যরকম। বাংলাদেশের হাতেগোনা ৩ - ৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এত চমৎকার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস চালু আছে। রাবি’র শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৯ টি বাস রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব ফিলিং স্টেশন। এমনকি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সংখ্যা বাংলাদেশের ভার্সিটিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

৭. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! প্যারিস রোডে যখন বিকেল বেলা হাঁটবে, দেখবে মনটা কেমন ভাল হয়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা আমি বর্ণনা করবো না। এটা তোমাদের নিজে এসে দেখে যেতে আমন্ত্রণ জানাবো। যে জায়গাগুলো ঘুরে দেখবে সেগুলোর নাম বলে রাখিছি –

প্যারিস রোড, বদ্ধভূমি, চারুকলা, শহীদ মিনার, সাবাস বাংলা, কেন্দ্রীয় মসজিদ, জোহা চত্বর, নারিকেল বাড়িয়া, পাখি কলোনি, আইবিএ ভবন, টিএসসিসি ইত্যাদি। আর সন্ধ্যার পর প্যারিস রোডে বা জোহা চত্বরে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। আর এই ক্যাম্পাস সৌন্দর্যের দিক থেকে দেশের সেরা ৫ এ

৮. দেশ সেরা শিক্ষকমন্ডলি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন বিশ্বসেরা পদার্থবিজ্ঞানী “প্রফেসর এমিরেটস অরুণ কুমার বসাক” স্যার। আছেন সিগন্যাল প্রসেসিং এ অন্যতম দেশসেরা “প্রফেসর ড. খাদেমুল ইসলাম মোল্লা” স্যার। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অধিকাংশ বিচারপতি, এডভোকেট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। কবি “হাসান হাফিজুর রহমান” স্যার ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক। ৫৮ টি ডিপার্টমেন্টে যে পরিমাণ দক্ষ শিক্ষক রয়েছেন তাদের সবার নাম এত ছোট্ট একটা আর্টিকেলে লিখে শেষ করা অসম্ভব

৯. ঢাকার বাইরের বেস্ট চয়েজ। তোমাদের বেশিরভাগেরই মূল লক্ষ্য ঢাকার ভেতরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। সবার কিন্তু ঢাকার ভেতরে ভর্তির সুযোগ হয় না। এখন প্রশ্ন হলো, ঢাকার বাইরে তোমার জন্য বেস্ট চয়েজ কোনটি? তুমি যাকেই জিজ্ঞেস করো, উত্তর হবে, রাজশাহী! দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ক্যাম্পাস রাবি। প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই দেওয়া হয় বিশেষ চিপ - যুক্ত স্মার্ট আইডি কার্ড। ঢাকার বাইরে খুব কম ভার্সিটির ক্যাম্পাসেই এত চমৎকার ওয়াইফাই সুবিধা আছে। মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য খুবই ভালো একটা পরিবেশ দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মেয়েদের জন্য ৬টি হল, ছেলেদের জন্য ১১টি এবং বৈদেশিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য একটি ডরমেটরি। সুবিশাল সেন্ট্রাল লাইব্রেরি তো রয়েছেই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। রয়েছে প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব সেমিনার লাইব্রেরী। আরও রয়েছে ২৫০০ আসন ক্ষমতাসম্পন্ন কবি কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন

১০. এক্সট্রা কারিকুলারস। দেশ সেরা ক্রিকেটার সাব্বির রহমান, আল আমিন হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দেশের দ্রুতগামী মানব মেজবাহ এবং মানবী শিরিন দুজনেই রাবি’র শিক্ষার্থী। যাঁরা দুজনেই বাংলাদেশের হয়ে রিও ডি জেনেরিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেন। এ তো গেলো খেলাধুলার কথা। সাংস্কৃতিক, গান, আবৃত্তি, নাটক, বিতর্ক এসবেও এগিয়ে আছে রাবি শিক্ষার্থীরা। কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ছিলেন রাবি’র শিক্ষার্থী। মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার চ্যাম্পিয়ন আবু হেনা রনি রাবি’র শিক্ষার্থী। আরেক স্ট্যান্ড আপ কমিডিয়ান, ‘হাসো’ এর চ্যাম্পিয়ন, মিরু রাবি’র শিক্ষার্থী। এবারে আসি যারা ক্লাব ও বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে আগ্রহী তাদের কথায়। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি হায়ার স্টাডি ক্লাব, আইটি সোহাইটি, ক্যারিয়ার ক্লাব, রোবোটিক্স ক্লাব, ইউনিস্যাব, গণশিল্পী, নবজাগরণ ফাউন্ডেশন প্রতিটি অর্গানাইজেশনই অনন্য। এবং এইসব প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে প্রচুর ভালো ভালো ইভেন্ট নিয়ে কাজ করছে

১১. ক্যাম্পাস লাইফ। বাংলাদেশের ভার্সিটিগুলোর মাঝে সবচেয়ে গোছানো ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের। এর ভূমি এরিয়া ৭৫৩ একর। আমাদের ক্যাম্পাসে রয়েছে সুবিশাল গ্যালারীযুক্ত স্টেডিয়াম, আছে জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল। তুমি জেনে খুশি হবে একমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই এত বড় আকারের নিজস্ব স্টেডিয়াম আছে। আর যারা সাঁতার পারো না এখনো, তাদের জন্য সুখবর, রাবি সুইমিং পুলে তুমি ওটা শিখে নিতে পারবে। আর মাছ ধরার শখ যাদের আছে, সিপ নিয়ে চলে যেও রাবি’র বিশাল পুকুরগুলোর কোন একটিতে। আর এত বড় ক্যাম্পাসে আড্ডা হাসি গান কান্না সব মিলিয়ে খুব দারুণ একটা ক্যাম্পাস লাইফ পাবে তুমি। টুকিটাকি চত্বরে দেখবে কতো প্রাণের মেলা। খাইদাই - গল্প - প্রেম - অনুপ্রেরণা সব পাবে টুকিটাকিতে। লিখার শুরুতে বলেছিলাম তোমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ১১টি কারণ নিয়ে আলোচনা করব। পেটুক ভাইয়া আপুদের জন্য ১২ নম্বর পয়েন্টটি বোনাস

১২. ভোজন বিলাশদের জন্য সুখবর। রাজশাহীর কালাইরুটি আর হাসের মাংসের সুনাম তো শুনেছো! কিংবা কাটাখালির কালাভূনা, টুকিটাকির মুরগী সিস্টেম, রাবি’র স্টেশন বটতলার ছোট মুরগির বড় পিচ, জমশেদের গরুর মাংস, নওহাটার ফুড আউটিং, চারুকলার দুপুরের খাবার! – এ তো গেলো স্থানীয় খাবারের নাম। তুমি যদি রেস্টুরেন্ট এর ফাস্টফুড বা চাইনিজ খাদ্যপ্রেমি হও, তোমার জন্য রাজশাহীর রেস্টুরেন্টগুলো ঈদ অফার মনে হবে। খাবারের মান যথেষ্ট ভাল, অথচ দাম ঢাকার অর্ধেক!

আরোও অনেক কিছুই আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করার মত। আজকের লিখার সংক্ষিপ্ত পরিসরে ওসব আর বললাম না। ওগুলো তোমার জন্য রেখে দিলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গর্বিত শিক্ষার্থী হয়ে তুমি নিজে ওগুলো ডিসকভার করে নিও।

image courtesy :

https://www.flickr.com/photos/sanyahmed/9330574102

https://commons.wikimedia.org/wiki/File:Rajshahi_university_stadium_gate.JPG